মাথাব্যাথার
ট্রিটমেন্ট এর জন্যে প্রথমেই রোগের উৎস সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন এবং সঠিক
ডায়াগনোসিস অপরিহার্য | সেই হেতু পেশেন্টটি বর্তমানে কি প্রকার মাথাব্যাথায় কষ্ট
পাচ্ছেন , তা শনাক্ত করতে হোমিওপ্যাথিক কেস-টেকিং অনুযায়ী রোগীকে বিভিন্ন ধরনের
প্রশ্ন করা হয় | যেমন : যন্ত্রণার অবস্থান মাথার ঠিক কোথায় এবং কোন দিকে , কি করে
ব্যাথা শুরু হলো,কোনো বিশেষ কারণ আছে কি না ,ব্যাথা কিভাবে শুরু হচ্ছে এবং কতক্ষণ
স্থায়ী হচ্ছে ,ব্যাথার সাথে অন্য কোনো বিশেষ অনুভুতি রয়ছে কি না , মাথাব্যাথা
ছাড়াও শরীরে আর কোনো কষ্টকর উপসর্গ আছে কি না , ইত্যাদির ওপর নির্ভর করে সঠিক
ডায়াগনোসিসে আসা যায় | নিচে কিছু উদাহরন দেওয়া হলো :-
১.অবস্থান
ও দিক:
এক দিকে – সন্দেহ করা যেতে পারে যে মাইগ্রেন (??) , ক্লাস্টার
মাথাব্যথা (??) ইত্যাদি |
ঘাড় থেকে শুরু
করে মাথার পিছনের দিকে - উচ্চ রক্তচাপ (??) বা সার্ভাইকাল
স্পনডাইলোসিস (??) |
ফ্রন্টাল এলাকা /
কপালে আরাআরি ভাবে – টেনশন হেডেক (??) , সাইনুসাইটিস্ (??) , চোখের পাওয়ার পরিবর্তন (??) হলেও
এইরকম মাথাব্যাথা হতে পারে |
টেম্পোরাল এলাকা (কান
সংলগ্ন মাথার অংশ ) – ওটাইটিস্ মিডিয়া
বা কানে পুঁজ রস হলে বা ঠান্ডা লাগার দরুণ ওটালজিয়া হলে (??) , তাছাড়াও ডেন্টাল কেরিস / দাঁতের ক্ষয় (??) ইত্যাদির জন্যেও মাথার এই অংশে ব্যাথা হতে পারে |
২.বিশেষ
অনুভুতি : ব্যাথার বিভিন্ন প্রকার থাকে | যেমন চেপে ধরা , কামড়ে ধরা ,
দপদপ করা , যেন মনে হচ্ছে ফেটে বেরিয়ে যাবে এরূপ বিভিন্ন প্রকার অনুভুতি হতে পারে
, যেগুলি রোগের কারণ
চিহ্নিত করতে সাহায্য করে।
৩.বিভিন্ন
শারীরিক উপসর্গ: রোগের
বিস্তারিতভাবে বর্ণনা পেতে জ্বর, খিঁচুনি, ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া,ফটোফোবিয়া ( মেনিনজাইটিস, এনকেফালাইটিস এ দেখা যায় ), বা গা গোলানো , বমিবমি ভাব (মাইগ্রেন,সার্ভাইকাল
স্পনডাইলোসিস,ব্লাড প্রেসারের হঠাৎ পরিবর্তন,ব্রেন টিউমারে
দেখা যায় ) ইত্যাদি অত্যাবশ্যক লক্ষণ গুলির ওপর মনোনিবেশ করা হয় |
৪.প্রকৃতি: মাথা যন্ত্রণা একটানা চলছে না কি কিছু সময়
ছাড়াছাড়া বিরাম সহ হচ্ছে জানা দরকার |
৫.সময়: ব্যাথা দিনের কোন বিশেষ সময় হচ্ছে কিনা , হলে কতসময় ধরে স্থায়ী
হচ্ছে , কত ঘন ঘন এটা আসে
ইত্যাদি হিস্ট্রি নেওয়া হয় |
৬. সবশেষে রোগীর, উদ্বেগ, মানসিক চাপ ইত্যাদির
জন্যে রোগের সৃস্টি কিনা , অর্থাত রোগের মূলে কোন Psychogenic কারণ আছে কিনা,এটা মূল্যায়ন করা উচিত |
যদি প্রয়োজন হয় তাহলে মস্তিষ্কের সিটি
স্ক্যান,এমআরআই স্ক্যান,লাম্বার পাংচার, সার্ভিকাল স্পাইনের এক্স-রে ইত্যাদি দ্বারা রোগ
নির্ণয় নিশ্চিত করতে পরামর্শ দেওয়া হয়।
স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য বিষয়ক আপডেট নিয়মিত ভাবে পেতে “HomeoKolkata”
ফেসবুক পেজ Follow / Like করুন |
প্রিয়জনেদের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতার প্রসারে “HomeoKolkata”
ফেসবুক পেজ Share করুন |
পাঠকদের সুবিধের
জন্যে এখানে বিভিন্ন প্রকার মাথাব্যাথার প্রকার গুলি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা
হলো | বিবরণের সুবিধার জন্যে মাথা ব্যাথার কারণগুলিকে নিচের তিন শ্রেণীতে ভাগ করা
হলো : -
১.
প্রাইমারী (কোন প্যাথলজি ছাড়াই) - যেমন মাইগ্রেন , ক্লাস্টার হেডেক ,
টেনশন টাইপ হেডেক ,
Psychogenic হেডেক ।
মাইগ্রেন:
১. মাথার একপাশে অথবা উভয় পাশে ব্যথা
২. চোখের পেছন
দিকে ব্যথা
৩. মনে হয় যেন
ব্যাথায় দপদপ করছে
৪. গা গোলানো
,সঙ্গে বমিবমি ভাব
৫. ফটোফোবিয়া বা আলোর
প্রতি অসহিষ্ণুতা
৬. গরম ঘরে
অসহনীয় কষ্ট হয় , নিম্ন তাপমাত্রায়
আরামদায়ক বোধ হয় |
বি.দ্র :
এই রোগীদের মাখন, পনির, নুডলস, চকলেট, কফি, আজিনামটো (মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট)থাকে এমন খাবার যেমন
চাইনিজ ফুড , ইত্যাদি খেতে নিষেধ করা হয়, কারণ এগুলি থেকে
মাথা ব্যাথা বেড়ে যেতে পারে |
ক্লাস্টার হেডেক :
১. সাধারণত মাথার ১ পাশে চখ্খুসংলগ্ন অঞ্চলে ব্যাথা বোধ হয়
২. ব্যাথা
কয়েকদিন ছাড়াছাড়া ফিরে আসে |
৩. যখন ব্যাথার আক্রমণ
শুরু হয়, রোগী দিনে 3-5
বার পর্যন্তও ব্যাথায় কষ্ট পেতে থাকেন |
টেনশন টাইপ হেডেক :
১. ব্যাথা সাধারণত পুরো মস্তিষ্কেই অনুভুত হয় , বিশেষত কপালে আরাআরি ভাবে প্রচন্ড যন্ত্রণা থাকে
২. চেপে ধরা ,
কামড়ে ধরা বা মাথা যেন ভেতর থেকে বাইরের দিকে ফেটে বেরিয়ে যাবে এরূপ অনুভুতি হয়
৩. ব্যাথায় কোনো
বিরতি থাকে না , তা নিয়মিত এবং একটানা চলতে থাকে |
Psychogenic মাথা ব্যাথা:
শারীরিক বা মানসিক চাপ, উদ্বেগ, অনিদ্রা ইত্যাদি কারণে এই ধরণের মাথা ব্যাথা হয়ে থাকে |
হোমিওপ্যাথিক ট্রিটমেন্ট : প্রাইমারী টাইপ মাথাব্যাথা অর্থাৎ যেখানে কোনো
গভীর প্যাথলজিক্যাল কারণ ছাড়াই ব্যাথা হচ্ছে , সেগুলিকে হোমিওপ্যাথিক পদ্ধতিতে সম্পূর্ণরূপে
নিরাময় করা যায়। উপসর্গ গুলির সাথে সদৃশ লক্ষণ সম্পন্ন উপযুক্ত হোমিওপ্যাথিক
ওষুধ নির্ধারণ করা হয়। এই পদ্ধতি রোগীর যন্তনাদায়ক লক্ষণ গুলির বিশেষ ভাবে উপশম
করতে পারে । তারপর ক্লাসিক্যাল হোমিওপ্যাথির নিয়ম অনুযায়ী অ্যান্টিমায়াসম্যাটিক কনষ্টিটিউশনাল ওষুধের
প্রয়োগে রোগের পুনরাবৃত্তি রোধ করা যায় |
To get more information on various diseases , click the link :
https://sites.google.com/site/homeokolkata/
২.
সেকেন্ডারী ( ব্রেনের কোনো প্যাথলজিক্যাল সমস্যার কারণে)- উদাঃ কোনো SOL (স্পেশ অকুপাইং
লিশন) –টিউমার , T.B., মেনিনজাইটিস, এনকেফালাইটিস, হাইড্রোসেফালাস(মস্তিষ্কে জল জমে যাওয়া)
ইত্যাদির জন্যে |
যেহেতু
সেকেন্ডারী হেডেকের পেছনে কোনো প্যাথলজিক্যাল কারণ থাকে , তাই মাথা ব্যাথার সাথে
কিছু বিশেষ লক্ষণ থাকলে আগে থাকতে সাবধান হওয়া দরকার , নতুবা ফল মারাত্মক হতে পারে
| যেমন :-
যদি মাথা ব্যাথার
১. সূত্রপাত হঠাৎ
হয় এবং তারপর ক্রমাগত চলতে থাকে
২. দিনের একটি
নির্দিষ্ট সময়ে ব্যাথা শুরু হয়
৩. হাঁচি বা কাশির সাথে
ব্যাথা অনুভূত হয়
৪. যন্ত্রণায় ঘুম
না এলে বা ঘুম থেকে উঠে প্রচন্ড মাথা ব্যাথা শুরু হলে
৫. কিছু নিউরো-ডেফিসিট
বর্তমান থাকলে , যেমন হাত পায়ের জোর কমে
গেলে , সময়ের সাথে
দৃষ্টিশক্তি , শ্রবণশক্তি ইত্যাদি হ্রাস পেলে এর পেছনে কিছু বড় প্যাথলজি থাকতে পারে
এবং সে ক্ষেত্রে অবশ্যই একজন ভালো ডাক্তারের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত।
এখন প্রশ্ন হল,
সেকেন্ডারী হেডেকের উপসর্গ গুলি কি কি? এবং কীভাবেই বা তাদের
শনাক্ত করা হয়?
এখানে এই সম্পর্কে
সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হল :
১. কোনো SOL (স্পেশ অকুপাইং
লিশন), যেমন ব্রেন টিউমার :
রোগের লক্ষণ:
মাথা ব্যাথার
সাথে
১) গা গোলানো ও
বমিবমি ভাব
২) মাথা ব্যাথা যদি
বমির পর কমে যায়
৩) মাথা ঘোরা
৪) পক্ষাঘাত/প্যারালাইসিস
৫) খিঁচুনি/কনভালশন
৬) নিউরো-ডেফিসিট
বর্তমান থাকলে , যেমন হাত পায়ের জোর কমে
গেলে , সময়ের সাথে
দৃষ্টিশক্তি , শ্রবণশক্তি হ্রাস , স্মৃতিবিভ্রম ইত্যাদি |
উপরোক্ত লক্ষণ
গুলি থাকলে একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী রোগের সনাক্তকরণে মস্তিষ্কের
সিটি স্ক্যান বা এমআরআই স্ক্যান করতে হবে |
২. মস্তিষ্কের প্রদাহজনক অবস্থা: উদাঃ মেনিনজাইটিস, এনকেফালাইটিস ইত্যাদি
রোগের লক্ষণ: মাথা ব্যাথার সাথে
১) প্রবল জ্বর
২) গা গোলানো ,
বমিবমি ভাব এবং বমি
৩) ঘাড় শক্ত
হয়ে যাওয়া
৪) অজ্ঞান হয়ে
যাওয়া
৫) খিঁচুনি/কনভালশন
ইত্যাদি |
সনাক্তকরণের
জন্যে
ক। মস্তিষ্কের সিটি
স্ক্যান বা এমআরআই স্ক্যান এবং
খ। লাম্বার
পাংচার ইত্যাদির প্রয়োজন হয় |
হোমিওপ্যাথিক ট্রিটমেন্ট : সেকেন্ডারী হেডেকের ক্ষেত্রে, প্রথমে
কারণ চিহ্নিত করতে হয়, যে মূলে কোনো প্রদাহজনক অবস্থা বা কোনো টিউমার
ইত্যাদি আছে কিনা |মস্তিষ্কের প্রদাহজনক অবস্থার ক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথিক ট্রিটমেন্ট
যথেস্ট সফল হয় । হোমিওপ্যাথি রোগীর ইমিউন সিস্টেমের উন্নতিসাধন করে ,
ফলে মানব শরীর ক্ষতিকারক প্যাথোজেনের প্রভাব থেকে পরিত্রাণ পেতে পারে । জ্বর, খিঁচুনি, ঘাড়
শক্ত হয়ে যাওয়া, বমি বমি ভাব, বমি, ফটোফোবিয়া ইত্যাদির জন্যে বাড়তি যত্নের সাথে রোগীকে
হোমিওপ্যাথিক নিয়ম অনুযায়ী ট্রিটমেন্ট প্রদান করা হয় | বিনাইন টিউমারের চিকিৎসায়
হোমিওপ্যাথিক মতে ট্রিটমেন্টের সাফল্যের অসংখ্য নিদর্শন রয়ছে | হোমিওপ্যাথিক
ট্রিটমেন্ট চলাকালীন , দেখা গেছে যে বহু ক্ষেত্রেই টিউমারের আকার ধীরে ধীরে কমে
যায়। মাথাব্যথা, খিঁচুনি/কনভালশন, পক্ষাঘাত/প্যারালাইসিস বা কোন নিউরো-ডেফিসিটের জন্যে
এডিশনাল হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার প্রয়োজন
হতে পারে।
৩.
অন্যান্য: উপরোক্ত কারণ
গুলি ছাড়াও অন্যান্য কিছু ক্ষেত্রে মাথা ব্যাথা হতে পারে | যেমন :
সাইনুসাইটিস্ –
মানুষের চোখ ও নাক সংলগ্ন অঞ্চলের চারদিকে এবং
কপালের নিচের অংশে কিছু এয়ার গ্যাপ থাকে | চিকিৎসার পরিভাষায় এগুলি প্যারা ন্যাসাল
এয়ার সাইনাস নামে পরিচিত | ঠাণ্ডা লাগা , ভাইরাল সংক্রমণ প্রভৃতির জন্যে যদি এই
স্থান গুলিতে প্রদাহ শুরু হয় , তবে তাকে সাইনুসাইটিস্ বলে |মাথা ব্যাথার সাথে ফ্লু
এর মত লক্ষণ নিয়ে রোগী কষ্ট পান |চোখ বা নাক দিয়ে কাঁচা জল পড়া,সর্দি,হাঁচি,নাকে
জ্বালা ইত্যাদি লক্ষণ থাকে |হোমিওপ্যাথি ট্রিটমেন্ট এ সাইনুসাইটিস্ একেবারে
নির্মূল করা সম্ভব |
চোখের পাওয়ারে
পরিবর্তন –
চোখের পাওয়ার
পরিবর্তন হলেও মাথা ব্যাথা হতে পারে |বই পড়তে গিয়ে যদি লেখা অস্পষ্ট দেখেন , বইয়ের
খুব কাছে ঝুঁকে পড়তে হয় বা দূরের জিনিস ঝাপসা দেখেন , তবে বুঝতে হবে যে চোখের
পাওয়ার চেঞ্জ হয়েছে |সে ক্ষেত্রে মাথা ব্যাথা থেকে রেহাই পেতে একজন ভালো চক্ষু-বিশেষজ্ঞের
পরামর্শ অবশ্যই আপনাকে নিতে হবে |
সার্ভাইক্যাল
স্পনডাইলোসিস –
এই ক্ষেত্রেও মাথা যন্ত্রণা হয় |ব্যাথা ঘাড় থেকে শুরু হয়ে মাথায় এবং তারপর কপালে ছড়িয়ে পড়ে |এর সাথে,ঘাড়ে আরষ্টতা,মাথা ঘোরা,গা গোলানো,বমিবমি ভাব থাকতে পারে |সার্ভাইক্যাল স্পনডাইলোসিসের ট্রিটমেন্ট এ হোমিওপ্যাথি খুবই ভালো চয়েস |হোমিওপ্যাথি ওষুধের সাথে সাথে ফিসিওথেরাপি এবং নেক-কলার ব্যবহার করলে খুবই ভালো রেসাল্ট পাওয়া যায় |
ব্লাড প্রেসারের হঠাৎ পরিবর্তন -
ব্লাড প্রেসার হঠাৎই
খুব বেড়ে গেলে বা ফল করলেও মাথা ব্যাথা হতে পারে | ঘুম থেকে ওঠার পর মাথা ভারী
লাগা ও মাথার পেছনদিকে ব্যাথা , অবসন্ন ভাব ,বিছানা থেকে উঠলেই মাথাঘোরা ,চোখের
সামনে অন্ধকার হয়ে যাওয়া ইত্যাদি লক্ষণ গুলি দেখা যায় |হোমিওপ্যাথিক মতে চিকিৎসায়
ব্লাড প্রেসারের নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত সফল ভাবে করা সম্ভব |বিশদ জানতে নিচের লিংকে
ক্লিক করুন :
For consultation with Dr.S.Mandal , click the link : Contact